৫ মাসে ৫০০ বিবাহিত নারী নিখোঁজ

0


 ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত মহকুমায় সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ও উদ্বেগজনক সামাজিক প্রবণতা সামনে এসেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মাত্র পাঁচ মাসে এই এলাকায় নিখোঁজ হয়েছেন ৫৩৬ জন তরুণী, যাদের প্রায় ৯০ শতাংশই বিবাহিত গৃহবধূ।




প্রথমদিকে ঘটনাগুলোকে নিছক ব্যক্তিগত ইস্যু হিসেবে দেখা হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা এক বৃহৎ সামাজিক জটিলতায় রূপ নিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ জানাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব নারীর মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক প্রেমের সম্পর্কের জেরেই ঘটছে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা।




ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে পরিচয়ের সূত্র ধরে অনেক নারী সংসার ছাড়ছেন, কখনো বাইক থাকা প্রেমিকের হাত ধরে, আবার কখনো স্বামীরই ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্কের জেরে।




অনেকে ছোট ছোট সন্তান রেখেও গোপনে ঘর ছেড়ে গেছেন। পুলিশের কাছে ফিরে আসার পর বহু নারী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন— “আমরা প্রাপ্তবয়স্ক, আমাদের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে।”




এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে— এসব ঘটনা কি নিছক টাকার মোহ, ভালোবাসার টান, নাকি বহু বছরের দাম্পত্য ক্লান্তির এক বহিঃপ্রকাশ?




সমাজতাত্ত্বিকদের বিশ্লেষণ মতে, এই নিখোঁজ হওয়ার প্রবণতা আসলে একটি গভীর মানসিক, সম্পর্কভিত্তিক ও সামাজিক সংকটের বহিঃপ্রকাশ। মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিঃসঙ্গ গৃহবধূদের সামনে এক নতুন পালাবার পথ খুলে দিয়েছে, যা আগের সমাজে কল্পনাও করা যেত না।




এই প্রসঙ্গে বারাসাত পুলিশ জেলার একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, “বর্তমানে প্রতিটি থানাকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। নিখোঁজ গৃহবধূদের খোঁজে বিশেষ নজরদারি চলছে। অনেক স্বামী আবার লোকলজ্জার ভয়ে পুলিশের কাছে স্ত্রীদের পরিচয় গোপন রাখারও অনুরোধ করছেন।”




এমনকি দেগঙ্গার একটি জনপ্রিয় ফেসবুক পেজে বিষয়টি আলোচনায় আসার পর এটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। অসংখ্য ফেসবুক গ্রুপ, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।




এই ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে— আমাদের সমাজে গৃহবধূদের অবস্থান ও মনস্তত্ত্ব আসলে কতটা বোঝা যাচ্ছে, আর কীভাবে প্রযুক্তি ও সম্পর্ক এক নতুন ধরনের সামাজিক বাস্তবতা তৈরি করছে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)