বিশেষ প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চার বছর স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও এমপিও ও টাইমস্কেল গ্রহণ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি এবং প্রধান শিক্ষকের নীরবতা—সব মিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন অনিয়মের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের পটভূমি ও নিয়োগ
১৯৬৭ সালে পশ্চিম তারাপাশায় দানবীর ওয়ালী নেওয়াজ খান সাহেব তাঁর পিতা-মাতার নামে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক (লাইব্রেরিয়ান) পদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মোহাম্মদ কামরুজ্জামান রিপন-কে নিয়োগ দেওয়া হয়।
কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, নিয়োগের মাত্র দুই বছর পর ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কামরুজ্জামান রিপন স্কুলে একটানা অনুপস্থিত ছিলেন। অথচ, তিনি এই সময় একটি বেসরকারি এনজিওতে চাকরি করেছেন, যা সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী সম্পূর্ণ বেআইনি।
অনুপস্থিতির পরও টাইমস্কেল!
স্কুলের হাজিরা খাতায় তাঁর দীর্ঘ অনুপস্থিতির সত্যতা মিলেছে। বিস্ময়করভাবে জানা গেছে, তিনি ২০১৫ সাল পর্যন্ত স্কুলে না থেকেও ২০১৩ সালের উপস্থিতি দেখিয়ে টাইমস্কেল গ্রহণ করেছেন। এটি জালিয়াতি এবং দায়িত্বের চরম লঙ্ঘন।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, ১৯-১১-২০১৫ তারিখে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তালিকায় কামরুজ্জামানের নাম ছিল না। প্রশ্ন উঠে—তবে কিভাবে তিনি এমপিও সুবিধা ও টাইমস্কেল গ্রহণ করলেন?
শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
স্কুলের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সবাই জানত তিনি এনজিওতে চাকরি করছেন। এটা গোপন ছিল না, কিন্তু কেউ কিছু বলেনি।”
এলাকাবাসীর মন্তব্য—“স্কুলে না থেকে বেতন, টাইমস্কেল—এটা কিভাবে সম্ভব? এই ঘটনায় দায়ী সবাইকে তদন্তের আওতায় আনতে হবে।”
প্রধান শিক্ষক ও প্রশাসনের ভূমিকা
বর্তমান প্রধান শিক্ষক আবুবকর ছিদ্দিক ২০১৯ সালে যোগদানের পরও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
সূত্র মতে, গত বছর এই প্রধান শিক্ষককে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
শিক্ষা অফিসের নিরবতা
কিশোরগঞ্জ শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, “আমাদের কাছে এখনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশ্ন একটাই—এই অনিয়ম চললো কীভাবে?
চার বছর ধরে শিক্ষক উপস্থিত না থেকেও চাকরি বহাল, টাইমস্কেল প্রাপ্তি, এনজিওতে চাকরি, প্রধান শিক্ষকের দায়হীনতা—সবকিছু মিলিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই স্কুলের নজরদারি করে কে?
এলাকাবাসী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা জোরালোভাবে দাবি করেছেন, “পুরো ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত করে, বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব, এমপিও এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় যাচাই করা হোক।”
---