কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে চলাচলকারী জনপ্রিয় “এগারসিন্দুর” এক্সপ্রেস ও “এগারসিন্দুর গোধূলি” ট্রেনে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী যাতায়াত করেন। কিন্তু এ রুটে ট্রেন ভ্রমণের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে একটি উদ্বেগজনক অনিয়ম — বিনা টিকিটে যাত্রী বহনের অভিযোগ। অভিযোগের তীর রেলওয়ে থানা পুলিশ, রেল কর্মকর্তাদের কিছু অসাধু সদস্য এবং ট্রেনের দায়িত্বরত টিটিদের (ট্রেন টিকিট পরীক্ষক) দিকে।ট্রেনে বিনা টিকিটে যাত্রী তুলছে কারা?
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে শুরু করে গজারিয়া, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, ভৈরবসহ বেশ কিছু স্টেশন থেকে রেলওয়ে পুলিশের ছত্রছায়ায় ও কিছু টিটির সহযোগিতায় প্রতিদিন গোপনে ভাড়া ছাড়া যাত্রী তোলা হয়। এসব যাত্রীদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নগদ অর্থ গ্রহণ করলেও টিকিট দেওয়া হয় না। ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে টিকিট কেটে উঠতে চাওয়া সাধারণ যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।একাধিক ট্রেনে একই অবস্থাএই অনিয়ম শুধু একটি ট্রেনেই সীমাবদ্ধ নয়। “এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস”, “এগারসিন্দুর গোধূলি”, “কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস”, “জামালপুর কমিউটার” – সবকটি ট্রেনেই প্রায় একই চিত্র। যাত্রীদের অভিযোগ, কিছু কনস্টেবল ট্রেন ছাড়ার সময় ‘নিজস্ব চক্রের’ কিছু লোক উঠিয়ে দেন, যারা পরে টিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম অর্থ দিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করেন৷ভুক্তভোগীদের ভাষ্য ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী রহমান বলেন,
“আমি টিকিট কেটে উঠি, কিন্তু দেখি আমার পাশের সিটে এক ব্যক্তি বসে আছে টিকিট ছাড়া। টিটি এসে তাকে কিছু বলে না। পরে শুনি সে নাকি পুলিশ ভাইয়ের পরিচিত।”
আরেক যাত্রী কাকলী বলেন,
“ভৈরব থেকে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী বিনা টিকিটে উঠে। এরা টিটিদের হাতে নগদ টাকা গুঁজিয়ে দেয়, কিন্তু সরকার কিছু পায় না।”
তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দাবি
এ ঘটনায় রেলওয়ের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছে কিশোরগঞ্জের সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা বলছেন,
“বিনা টিকিটে যাত্রী তুললে শুধু দুর্নীতিই নয়, বরং রেল ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়। এটি বন্ধে কঠোর নজরদারি ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
সরকার রেল যোগাযোগ উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এ ধরনের দুর্নীতি এবং টিকিট বাণিজ্য বন্ধ না হলে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে না, বরং রাষ্ট্রীয় আয়ও ব্যাহত হবে।
👉 কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোজনসহ কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।