Top News

ইসরাইলি হামলায় গাজায় ২১ হাজার শিশু পঙ্গু: জাতিসংঘ


 ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের ধারাবাহিক হামলায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য বলছে, শুধুমাত্র শিশুদের ওপর এর প্রভাব অকল্পনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। গত প্রায় দুই বছরে—২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে—এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২১ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এই তথ্য প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের কমিটি অন দ্য রাইটস অব পার্সনস উইথ ডিসঅ্যাবিলিটিস (Committee on the Rights of Persons with Disabilities)। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের এই কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

জাতিসংঘের কমিটি জানায়, গাজার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রায় ৪০ হাজার ৫০০ শিশু নতুনভাবে আহত হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু স্থায়ীভাবে অঙ্গহানি বা পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যার হিসেবে নয়, বরং গাজার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেওয়ার এক ভয়াবহ চিত্র। কারণ শিশুদের একটি বড় অংশ এখন আর কখনো স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে, দৌড়াতে বা খেলতে পারবে না।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাদের আক্রমণের সময় গাজাবাসীকে একাধিকবার বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রবণপ্রতিবন্ধী বা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য এই সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ কার্যত অকার্যকর ছিল। অনেকেই নির্দেশ শুনতে বা লিখিত বার্তা পড়তে না পারায় নিরাপদ স্থানে যেতে ব্যর্থ হন। এর ফলে তারা হামলার শিকার হয়ে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদন বলছে, অনেক প্রতিবন্ধী মানুষকে অসম্মানজনক ও অমানবিক পরিস্থিতিতে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, হুইলচেয়ার বা চলাচলের সহায়ক যন্ত্র ছাড়া প্রতিবন্ধীদের অনেককে বালু বা কাদার মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে পালাতে হয়েছে। এটি শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও তাদের ওপর গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।

জাতিসংঘের কমিটি সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে যে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে, তার সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে প্রতিবন্ধী মানুষদের ওপর। সাধারণ মানুষ যেখানে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা বা স্যানিটেশনের জন্য লড়াই করছে, সেখানে প্রতিবন্ধীরা আরও বেশি সংকটে পড়েছেন। তাদের অনেকেই মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য সম্পূর্ণভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, গাজায় প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিস্থিতি এখন মানবিক বিপর্যয়ের চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। যদি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি না হয় এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা গাজায় প্রবেশের সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে আরও হাজার হাজার শিশু এবং অসহায় মানুষ চরম সংকটে পড়বে।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন আবারও প্রমাণ করেছে, গাজায় চলমান যুদ্ধ কেবল সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। বিশেষ করে শিশু ও প্রতিবন্ধীরা যে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়েছে, তা পুরো বিশ্বকে নাড়া দেওয়ার মতো। গাজায় এখন বেঁচে থাকার লড়াই শুধু বোমা থেকে বাঁচার নয়, বরং খাবার, পানি ও চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন