Top News

ঢেমঢেমিয়া কালী মেলা: দুই শতাব্দীর ঐতিহ্যে মুখর বীরগঞ্জ, ঘোড়া-মহিষের হাটে উৎসবের রঙে ভাসছে জনপদ



সিয়ামুর রশিদ,স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুরঃ

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নে শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী “ঢেমঢেমিয়া কালী মেলা”। প্রায় দুই শত বছরের ঐতিহ্য বহন করা এই মেলাটি এখন শুধু ধর্মীয় আয়োজন নয়, উত্তরবঙ্গের বৃহৎ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।


কার্তিক মাসের শ্যামাপূজার অমাবস্যা উপলক্ষে আয়োজিত এ মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জনপদে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই মেলাপ্রাঙ্গণে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের।


ঘোড়া ও মহিষের হাটে লেনদেনের ব্যস্ততা

ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রংপুর ও পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে তাজিয়া, ভুটানি, মনিপুরী, পঙ্খীরাজ ও রাজা বাহাদুর জাতের ঘোড়া। প্রতিটি ঘোড়াই দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রতি জোড়া মহিষ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। পশুপ্রেমী ক্রেতারা দরদামে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন হাটজুড়ে।


স্থানীয় কৃষক মো. রহিম উদ্দিন বলেন, “আমরা প্রতিবছর এই মেলার জন্য অপেক্ষা করি। এখানে ঘোড়া-মহিষের ভালো দাম পাওয়া যায়, আর একদিনের জন্য হলেও গ্রামের মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে।”


লোকজ সংস্কৃতির রঙিন আয়োজন

শুধু পশুর হাট নয়, মেলাকে কেন্দ্র করে বসেছে লোকজ ঐতিহ্যের এক প্রাণবন্ত আসর। নাগরদোলা, মিষ্টির দোকান, খেলনা, হস্তশিল্প, বাঁশ-বেতের সামগ্রী আর স্থানীয় শিল্পীদের গান—সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবের নগরী। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে আলোকসজ্জায় ঝলমল করে ওঠে পুরো মাঠ, আর বাজতে থাকে ঢোল-করতালের সুর।


স্থানীয় শিক্ষক পরিমল চন্দ্র রায় বলেন, “ঢেমঢেমিয়া মেলা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক। এই মেলার মাধ্যমে গ্রামের ঐতিহ্য আজও জীবিত আছে।”


প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তা জোরদার

মেলাকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, “ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠে কাজ করছেন।”


দীর্ঘ দুই শতাব্দীর ঐতিহ্য ধরে রাখা এই ঢেমঢেমিয়া কালী মেলা এখন উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি—যেখানে ধর্ম, উৎসব ও মানুষের মিলনমেলা এক সুতোয় গাঁথা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন