আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি ছাড়াই ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সনদের কপি পাঠানো হয়েছে। সমন্বিত খসড়ার সঙ্গে চূড়ান্ত সনদে বেশ কয়েকটি পার্থক্য রয়েছে।
এমনকি প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেলকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। বুধবার নিজের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে বিষয়টি জানিয়েছেন নেপালের খ্যাতিমান প্রবীণ সাংবাদিক কিশোর নেপাল। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার থেকেই প্রেসিডেন্ট পাউডেল ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রাম সহায় যাদব সেনা নিরাপত্তায় রয়েছেন।
সাংবাদিকের সেই পোস্টটি থেকে আরও জানা গেছে- ‘প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তারা যদি চায় তাকে হত্যা করতে পারে। এমনকি তার মৃত্যুর জন্য বিক্ষোভকারীদের দায়িও করতে পারে। এরপর তাদের যা ইচ্ছা তা তারা করতে পারে।’ বুধবার সেনা সদর দপ্তরে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সভায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান কিশোর নেপাল। পরের দিন বৃহস্পতিবারই অবশ্য জাতির উদ্দেশে দেওয়া জনগণ এবং রাজনৈতিক অংশীদারদের শান্ত থাকার এবং শান্তি ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তার আহবান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পাউডেল। কিন্তু টুইটের জের ধরে পানি ঘোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি স্থানে।
বিক্ষোভের চতুর্থ দিনে (বৃহস্পতিবার) কারফিউ’র মাঝে ২ ঘণ্টা বিরতিতে কাঠমান্ডু এবং রাজধানীর বাইরের কয়েকটি জেলায় বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ করেছেন জেন-জিরা। স্লোগানে স্লোগানে তরুণরা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমরা সামরিক শাসন চাই না। গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই।’
উল্লেখ্য-নেপালে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ রয়েছে। নতুন করে কোনো কারফিউর ঘোষণা এখনো দেওয়া হয়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬-৯টা ও বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কেনাকাটা ও যাবতীয় কাজের জন্য কারফিউ শিথিল থাকে। রাস্তায় রাস্তায় তখনো সেনা টহল চলছিল। পুলিশ বা সেনা কেউই তাতে বাধা দেয়নি।
কাঠমান্ডুর এক সংবাদ সম্মেলনে এদিন চলমান সংসদ ভেঙে দিয়ে ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে জেন-জি’র একাংশ। সন্ধ্যায় সেনাসদর দপ্তরে বসার কথা রয়েছে আরেক পক্ষের। এ ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন সংকট সমাধানে যুব গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মৌলিক বিভক্তির খবর পাওয়া গেছে। এর কারণ কেউ কেউ দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চাইলেও কেউ কেউ ২০০৮ সালে বিলুপ্ত রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতাদের একজন অনিল বানিয়া বলেছেন-তারা বর্তমান সংবিধানে ‘প্রয়োজনীয় পরিবর্তন’ করতে চান। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বৃদ্ধ নেতাদের ওপর বিরক্ত হয়ে এই আন্দোলন করেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিলাম, কিন্তু রাজনৈতিক কর্মীরা অগ্নিসংযোগ করেছিল এবং তারপর অবকাঠামো ভাঙচুর করেছিল। অনলাইন জরিপের মাধ্যমে, অন্তর্বর্তকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে সাবেক বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে ভোট দিয়েছেন। আমরা সংবিধান পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি না, বরং এতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনব। ছয় মাসের মধ্যে আমরা নির্বাচনে যাব।’
জেনজির আরেক দল অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেতা কুলমান ঘিসিংয়ের নাম প্রস্তাব করেছেন। এক নেতা দিবাকর দঙ্গল তরুণদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা নেতৃত্ব নিতে সক্ষম নই এবং নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য যথেষ্ট পরিপক্ব হতে আমাদের সময় লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, যুব গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভেদ বপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
‘দলের কিছু সদস্যের ভুল ধারণা আছে যে, তারা অনুপ্রবেশ করে বিভেদ তৈরি করতে পারে। এই রক্তপাত তোমাদের (পুরাতন নেতাদের) কারণে। যদি কেউ রক্তপাত শুরু করে, তাহলে তারা টিকবে না। আমরা রক্তপাত চাই না। আমরা সংসদ ভেঙে দিতে চাই, কিন্তু সংবিধান বাতিল করতে চাই না।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন