স্টাফ রিপোর্টার: সিয়ামুর রশিদ, দিনাজপুর
দিনাজপুর শহরের লাইনপাড়, পশু হাসপাতালের গলি ও ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল রাতভর চলা এ অভিযানে ১৫ জন মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী ও জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
অভিযানের প্রেক্ষাপট
দিনাজপুর শহরের লাইনপাড় ও পশু হাসপাতালের গলি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার আখড়ায় পরিণত হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। পাশাপাশি ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জুয়ার আসর বসত, যেখানে প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জুয়ায় আসক্ত হচ্ছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব তথ্যের ভিত্তিতে গোপন অভিযানের পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাত সাড়ে আটটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একাধিক টিম একযোগে অভিযান চালায়।
পুলিশের বক্তব্য
অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান,
“দিনাজপুরের মতো জেলায় মাদক ও জুয়া সামাজিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন নজরদারি চালানোর পর এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করি। গ্রেফতারদের মধ্যে কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা চলবে। পাশাপাশি মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের সংশোধনের জন্য কারাদণ্ডের পাশাপাশি পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
লাইনপাড় এলাকার বাসিন্দা শফিকুল আলম বলেন,
“আমাদের এলাকার তরুণরা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। পরিবারগুলো অশান্তিতে ছিল। এই অভিযানে আমরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছি।”
পশু হাসপাতালের গলির বাসিন্দা মোহনা বেগম বলেন,
“প্রতিদিন সন্ধ্যার পর রাস্তা দিয়ে বের হতে ভয় লাগত। মাদকের কারণে অপরাধও বেড়ে যাচ্ছিল। এখন যদি এই অভিযান নিয়মিত হয়, তাহলে আমরা শান্তিতে থাকতে পারব।”
ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান,
“জুয়ার আসরে এলাকার তরুণরা রাত কাটাত। ব্যবসার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছিল। পুলিশের এ পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়।”
বিশেষজ্ঞ মতামত
স্থানীয় সমাজকর্মী ডা. আব্দুল করিম বলেন,
“মাদক ও জুয়া কেবল অপরাধ নয়, এগুলো সামাজিক ব্যাধি। এগুলো বন্ধ করতে হলে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসন—সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পুলিশের অভিযান প্রশংসনীয় হলেও শুধু গ্রেফতার করলেই চলবে না; আসক্তদের পুনর্বাসন ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানো দরকার।”
প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন,
“মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি রয়েছে। অভিযানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের শুধু শাস্তিই নয়, তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি যারা ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মানবিক বার্তা
দিনাজপুরে মাদকবিরোধী এই অভিযান সমাজে এক শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে—
👉 অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
👉 মাদকের অন্ধকারে নয়, আলোয় ফিরুক যুবসমাজ।
এই অভিযানের মাধ্যমে দিনাজপুরবাসী আশা করছে, মাদক ও জুয়ামুক্ত হয়ে তাদের সমাজ আবারও শান্তিপূর্ণ ও সুস্থ পরিবেশ ফিরে পাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন