Top News

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ঢাক-ঢোলের হাটে জমজমাট পরিবেশ


 

মোঃ জোনায়েদ হোসেন জুয়েল,

স্টাফ রিপোর্টার ,কিশোরগঞ্জ


কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবকে ঘিরে ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাট। প্রায় পাঁচ শতাব্দী ধরে টিকে থাকা এ আয়োজন ঘিরে প্রতি বছরই জমে ওঠে উৎসবের আবহ। মহাষষ্ঠীর আগে কয়েকদিন ধরে বসা এ হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাদ্যযন্ত্রশিল্পীরা সমবেত হন।

এ হাটে ঢাক-ঢোল, বাঁশি, সানাই, করতাল, ঝনঝনি, মন্দিরা ও খঞ্জনিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের সুরে মুখর হয়ে ওঠে কটিয়াদীর পুরান বাজার এলাকা। পূজা আয়োজকদের সঙ্গে বাদকদের বায়না হয় এখানেই। বাদকের দক্ষতা ও দলের শক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত হয় তাদের চুক্তির মূল্য। কোনো কোনো দল সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকারও বেশি অঙ্কে চুক্তিবদ্ধ হন।

নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শিল্পীরা এসে হাজির হয়েছেন এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে। কেউ দুই-তিনজনের ছোট দল নিয়ে, আবার কেউ আট-দশজনের বড় দল নিয়ে চুক্তি করছেন পূজা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। এতে যেমন বাদকেরা উপার্জনের সুযোগ পান, তেমনি পূজা মণ্ডপগুলোতেও প্রাণ ফিরে আসে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের তালে।

স্থানীয়রা জানান, এ হাট শুধু চুক্তি করার স্থান নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। ঢাকের তালে তালে উৎসব উপভোগ করতে হাজারো মানুষ ভিড় করেন হাটে। দর্শনার্থীরা শুধু বাজনার আসর উপভোগই করেন না, বরং অনেকেই ঢাকিদের দক্ষতা যাচাই করে দরদাম ঠিক করেন।

ঐতিহাসিক সূত্র মতে, ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে রাজা নবরঙ্গ রায়ের আমলে কটিয়াদীতে প্রথম এই ঢাকের হাটের সূচনা হয়। দুর্গাপূজার সময় সেরা ঢাকিদের খুঁজে আনতেই রাজা এ হাট চালু করেছিলেন। এরপর থেকে যুগে যুগে এ আয়োজন টিকে আছে, যা এখনো বাঙালি সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে আছে।

ঢাক-ঢোলের বাজনা যে শুধু পূজার আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এক ধরনের আবেগ ও ঐতিহ্য—তা হাটে এসে বোঝা যায় স্পষ্টভাবেই। তবে অনেক শিল্পী জানিয়েছেন, আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ভিড়ে ঢাকের কদর আগের মতো নেই। এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন তারা।

স্থানীয় সংগঠন শ্রী মা সংঘ এর উদ্যোগে প্রতিবছর এ আয়োজন সম্পন্ন হয়। দুর্গাপূজা শুরুর আগে শেষ মুহূর্তে বায়না ঠিক করতে ঢাকিদের ভিড়ে কটিয়াদী যেন এক বিশাল উৎসবের মঞ্চে পরিণত হয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন