সিয়ামুর রশিদ, স্টাফ রিপোর্টার (দিনাজপুর)
দিনাজপুর শহরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী রাজবাড়ী— একসময় ছিল গৌরব, ঐতিহ্য আর স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন। কিন্তু বছরের পর বছর অবহেলায় হারিয়েছে তার জৌলুস, দেয়াল ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী এই রাজপ্রাসাদ। অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখছেন দিনাজপুরবাসী।
ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন প্রাণের ছোঁয়া
দীর্ঘদিন আগাছায় ঢাকা প্রাচীর ও ভাঙা দেয়াল আজ কোদালের আঘাতে ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছে তার পুরোনো রূপ। শ্রমিকদের ব্যস্ততায় রাজবাড়ীর প্রাঙ্গণে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। মেঝের ধুলোময় ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে একসময়কার দোতলা-তিনতলার অবশেষ, যা এক যুগ ধরে ছিল অরক্ষিত ও অবহেলিত।
ইতিহাসের গৌরব, অবহেলার যন্ত্রণা
রাজবাড়ী শুধু স্থাপনা নয়— এটি দিনাজপুরের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অংশ। স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন সরকার বলেন,
> “ছোটবেলায় আমরা এই রাজবাড়ী ঘুরতে আসতাম, তখন এটি অনেক সুন্দর ছিল। এখন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি প্রশাসন এবার সত্যি কাজটা করে শেষ করে, তাহলে হয়তো আমাদের অতীতটা আবার ফিরে পাব।”
আরেক বাসিন্দা সুধাংশু রায় বলেন,
> “রাজবাড়ী মানে শুধু ইট-পাথর না, এটা আমাদের আবেগের জায়গা। অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি আগে, কিন্তু কাজ হয়নি। এবার অন্তত আশা করছি কথার সঙ্গে কাজও মিলবে।”
প্রশাসনের উদ্যোগে আশার সঞ্চার
বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা। অবশেষে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রাজবাড়ীর আংশিক সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ভাঙা অংশগুলো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান,
> “আমরা চাই রাজবাড়ীকে এমনভাবে পুনর্গঠন করতে যেন এটি দিনাজপুরের পর্যটন উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে। সংস্কারের পাশাপাশি এখানে ঐতিহ্যবাহী প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।”
দিনাজপুরবাসীর প্রত্যাশা
রাজবাড়ী পুনর্গঠনের এই উদ্যোগে নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন দিনাজপুরবাসী। অনেকেই চান, সংস্কারের পর রাজবাড়ী যেন কেবল স্থাপত্য নয়, ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে।
একজন তরুণ দর্শনার্থী আব্দুল্লাহ মেহেদী বলেন,
> “আমরা চাই রাজবাড়ীটা এমনভাবে গড়ে তোলা হোক যেন দিনাজপুরের নামটা নতুন করে উজ্জ্বল হয়। এখানে পর্যটকরা আসবে, ইতিহাস জানবে, আর শহরটা আবার প্রাণ ফিরে পাবে।”
উপসংহার
যদিও দেরিতে শুরু হয়েছে কাজ, তবু এই সূচনাই দিনাজপুরবাসীর মনে জাগিয়েছে এক নতুন আশাবাদ। রাজবাড়ীর দেয়ালে জমে থাকা ধুলোর নিচে লুকিয়ে আছে শত বছরের ইতিহাস, যা আবারও মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় নতুন রূপে।
প্রশ্ন এখন একটাই—
সংস্কারের এই শুরু কি ফিরিয়ে আনতে পারবে রাজবাড়ীর হারানো জৌলুস, নাকি আবারও হারিয়ে যাবে প্রতিশ্রুতির ভেতরেই?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন