টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুন কক্স-এর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের ১৭ জন সহকারী শিক্ষক। জুন কক্স রাজবাড়ী জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত আলী হোসেন পনির স্ত্রী এবং আলী হোসেন পনির বাবা আওয়ামীলীগের গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত আকতার উদ্দিন মিয়ার পুত্রবধু।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর জমা দেওয়া এক লিখিত আবেদনে শিক্ষকরা দাবি করেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থের কোনো স্বচ্ছ হিসাব প্রদান করেননি প্রধান শিক্ষক। ফলে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালের আগষ্ট মাস থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত কল্যাণ তহবিলের হিসাব। ২০১৯ সালের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সংগ্রহ করা চাঁদার হিসাব (আয়োজন হয়নি, কিন্তু চাঁদা উত্তোলন করা হয়েছে)। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত স্লিপের টাকা হিসাব। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মাসিক ৯ হাজার টাকা হারে সংগ্রহ করা টাকা হিসাব। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত শিশু শ্রেণীর টাকা। শিক্ষক বদলীর টাকার হিসাব। শিক্ষকদের উপবৃত্তির টাকা (একবার দেয়া হয়েছে)। কোচিং বাবদ শিক্ষকদের নিকট থেকে নেয়া টাকার হিসাব (জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে)। ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি বাবদ জনপ্রতি ২ (দুই) হাজার টাকা থেকে গ্রহণ (শিক্ষক সেলিনা ইয়াসমিনের দায়িত্বে)। ৫০০ টাকা করে শিক্ষার্থী ভর্তি ফরম বিক্রয় (৩বছর)। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ব্যাংক স্টেটমেন্ট। কন্টিডেন্সির হিসাব। বার্ষিক পুরাতন বই-খাতা বিক্রির হিসাব। বর্ধিত ভবনের পুরাতন গেট ও পিলারের রড বিক্রি হিসাব। বর্ধিত ভবন থেকে বড় আকারের মেহগনি গাছ কর্তন হিসাব। সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিইও) মোশারফ হোসেনের বিদায়ে ২২ জন সহকারী শিক্ষকের কাছ থেকে ফোর্স করে ১ হাজার টাকা করে উত্তোলনসহ মোট ১৬টি খাতের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকরা।
তারা আরও জানান, সম্প্রতি কল্যাণ তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলনের পূর্বশর্ত হিসেবে এসব হিসাবের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাকে তারা বাধ্যতামূলক করেছেন। তারা দাবি করেন, এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে বিস্তারিত হিসাব গ্রহণ না করা পর্যন্ত কল্যাণ তহবিল থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন করা হবে না।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে অনুলিপিও প্রেরণ করা হয়েছে।
নামপ্রকাশে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, নামপ্রকাশে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, এই বিদ্যালয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। জেলার সবচেয়ে বৃহৎ প্রাথমিক বিদ্যালয় এটি। বিগত ১১ বছর ধরে জুন কক্স ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আসছেন। ২০১৩ সালে ক্ষমতা দেখিয়ে তিনি ওই বিদ্যালয়ের তৎকালিন প্রধান শিক্ষক প্রভাষ কুমার সরকারকে অপমান অপদস্ত করে বিদায় করে প্রধান শিক্ষককের পদ দখল করেন। তার এই সকল অপকর্ম নিয়ে যে সব শিক্ষক মুখ খোলার চেষ্টা করেছেন জুন কক্স ওই সকল শিক্ষকদের আওয়ামীলীগের নেতাদের ডেকে এনে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে। সেই সাথে দেখাতেন বদলীর আতংক। অপরদিকে, জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে আজ যে আবেদন করেছেন সহকারি শিক্ষকরা, জুন কক্স প্রতিজনকে পৃথক পৃথক ভাবে তার রুমে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতিও প্রদর্শন করেছেন করে অনেকেই জানিয়েছেন।
লিখিত আবেদনকারী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহিনা, রোকেয়া, নাসিমা, শম্পা, তাহমিনা, সেলিনা, রহিমা, লাভলী, সুরাইয়া, মোঃ মোজাফ্ফর হোসেন, শাহনাজ, ফারহানা, কামরুন্নাহার, রোশমা, ফেরদ্দসী, ছালমা, সোনিয়ার দাবি করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এসব অনিয়ম চললেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। তবে এখন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক জুন কক্স মুঠোফোনে জানান, “আপনার যা খুশি আপনি লিখে দেন”।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ তাবিবুব রহমান জানান, অভিযোগটি তিনি পেয়েছেন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন