Top News

ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ চার্লি কার্ক কেন খুন হলেন, কী ঘটেছিল, কে ছিলেন তিনি


 আমেরিকার রক্ষণশীল রাজনীতির এক পরিচিত মুখ চার্লি কার্ককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ইউটা ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে ‘আমেরিকান কামব্যাক ট্যুর’–এর অংশ হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন ৩১ বছর বয়সী এই রক্ষণশীল নেতা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁর সামনে উপস্থিত হাজারো দর্শকের ভিড়ের মাঝেই আচমকা গুলির শব্দ শোনা যায়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই কার্ক তাঁর গলায় হাত দেন এবং চেয়ার থেকে মাটিতে পড়ে যান। উপস্থিত দর্শকেরা আতঙ্কে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন।

কীভাবে ঘটনা ঘটল?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কার্ক বাইরে খোলা জায়গায় ‘আমি ভুল প্রমাণ করুণ’ শীর্ষক একটি প্রশ্নোত্তর সেশনে বসেছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে একজন শিক্ষার্থী তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে গণহত্যা এবং ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করেন। উত্তপ্ত এই বিতর্ক চলার মাঝেই গুলি চালানো হয়। পুলিশের তথ্যমতে, গুলি চালানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের ছাদ বা জানালা থেকে। গুলি কার্কের গলায় লাগে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, তবে আর কেউ আহত হয়নি।

ইউটা ভ্যালি ইউনিভার্সিটি পুলিশ প্রধান জেফ লং জানিয়েছেন, সেখানে ৩ হাজারের বেশি লোক উপস্থিত ছিলেন এবং ছয়জন পুলিশ নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। তারপরও এই হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যায়নি। ইউটার গভর্নর স্পেনসার কক্স একে সরাসরি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন।

কে ছিলেন চার্লি কার্ক?


চার্লি কার্ক ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং প্রভাবশালী রক্ষণশীল সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’ এর সহ–প্রতিষ্ঠাতা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি সংগঠনটি গড়ে তোলেন, যা অল্প সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রক্ষণশীল ছাত্র আন্দোলনে পরিণত হয়। কার্ক তরুণ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।


তিনি নিয়মিত ফক্স নিউজে উপস্থিত হতেন এবং ‘দ্য চার্লি কার্ক শো’ নামে এতটি জনপ্রিয় পডকাস্ট ও রেডিও অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখেরও বেশি। নিজের বক্তব্যে তিনি প্রায়ই অভিবাসন, ইসলাম, গর্ভপাত ও অস্ত্র আইন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করতেন। ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং গাজা যুদ্ধের পক্ষে অবস্থানও ব্যাপক আলোচিত ছিল।


বিতর্কিত অবস্থান

কার্কের রাজনৈতিক অবস্থান অনেক সময়ই তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। তিনি দাবি করতেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাদা মানুষেরাই বেশি হামলার শিকার হন এবং আফ্রো–আমেরিকান আন্দোলনকে একটি ‘ভ্রান্ত ধারণা’ বলে অভিহিত করতেন। ইসলাম নিয়ে তাঁর মন্তব্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। আবার বন্দুক রাখার সাংবিধানিক অধিকারকে সমর্থন করে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রতি বছর কিছু প্রাণহানি হলেও এই অধিকার রক্ষা করা জরুরি।’ গর্ভপাত নিয়েও তাঁর অবস্থান ছিল কঠোর; এমনকি ধর্ষণের শিকার নাবালিকাও গর্ভপাতের সুযোগ পাবে না বলে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত

ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন হিসেবে দুজনকে আটক করা হলেও পরে প্রমাণের অভাবে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী কালো পোশাকে ছিলেন এবং একটিমাত্র গুলি চালানো হয়। এখনো হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করা যায়নি।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

হত্যাকাণ্ডের পর পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে আমেরিকার জন্য ‘অন্ধকারময় মুহূর্ত’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জো বাইডেন, বিল ক্লিনটন ও জর্জ বুশসহ ডেমোক্র্যাট–রিপাবলিকান দুই শিবিরের শীর্ষ নেতারা এই ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতাকে গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তাঁকে ‘সিংহ হৃদয় বন্ধু’ বলে আখ্যা দেন। রাশিয়ার বিশেষ দূত কার্কের রাশিয়াপন্থী অবস্থানের কথা স্মরণ করেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারও এই রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানান।

মাত্র ৩১ বছর বয়সে চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড আমেরিকার রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সমর্থকেরা তাঁকে দেশপ্রেমিক ও নির্ভীক নেতা হিসেবে স্মরণ করছেন, আর সমালোচকেরা বলছেন, তাঁর উসকানিমূলক রাজনীতি দ্বন্দ্বকে ঘনীভূত করেছে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—এই হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়াবহ মাত্রাকে সামনে এনে দিয়েছে, যা দেশটির গণতন্ত্র ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন